বিএনপি’র চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গত রবিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পেশাজীবীদের সম্মেলনে ভাষণদানকালে বলেছেন- মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিবাহিনী এক নয়। মুক্তিবাহিনীর উদ্দেশ্যে তিনি আরো বলেন- মুক্তিযুদ্ধ আপনারা করেননি, আপনারা দেশের সীমানা পাড়ি দিয়েছিলেন। জাতীয় সংসদের আসন্ন নির্বাচন এবং নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন টলটলায়মান । বোধ করি সে কারণেই তার এই বক্তব্য কোন মিডিয়াতে তেমন গুরুত্বসহকারে প্রকাশ করতে দেখা যায়নি। অথচ এই বক্তব্যটি স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার বেদিমূলে কুঠারাঘাত। যাঁরা জীবন বাজি রেখে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন, অকাতরে আত্মদান করেছেন, পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন এবং জীবিতরা প্রাণপন লড়ে স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে এনেছেন, তাঁদের সেই সম্মিলিত অবিনাশী কীর্তিগাঁথা বাহিনীর প্রতি স্বাধীনতার ৪২ বছর পর দেশের অন্যতম প্রধান জাতীয় নেতার এহেন বক্তব্যের নিন্দা জানাবার ভাষা বোধ করি অভিধান বহির্ভূত। বেশভূষা দেখেতো তাকে অপ্রকৃতিস্থ বলে মনে হয় না! তা কী করে তিনি এ ধরণের বক্তব্য দিতে পারেন?
এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়া ৪২ বছর পর নতুন করে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত করলেন। তিনি যে আসলেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী নন, তা তিনি নিজেই আরেকবার জানান দিলেন। দেশ ও জাতির জন্য দুর্ভাগ্য যে, মুক্তিবাহিনী তথা মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে বক্তব্যদানকারী এ হেন এক ব্যক্তিকে ভোট দিয়ে দেশের জনগণ একাধিকবার সংসদ সদস্য এবং প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করেছে। বিএনপি’র যেসব নেতা-কর্মী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর সদস্য হিসেবে যুদ্ধ করেছেন তাদের কারো মধ্যে ন্যূনতম মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগ্রত থাকলে তাদের মুখ বুজে থাকার কোন কারণ দেখি না এবং অচিরেই তারা ঐ দল ত্যাগ করবেন বলে আশা করি।
বেগম খালেদা জিয়াকে জিজ্ঞেস করতে চাই- মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিবাহিনী এক নয়, এ তত্ত্ব তিনি কোথায় পেলেন? ’৭১ সালে যারা মুক্তিযুদ্ধের প্রয়োজনে সীমানা পাড়ি দিয়েছেন, প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে প্রাণপন যুদ্ধ করেছেন, তারা মুক্তিযোদ্ধা নন, তা’হলে মুক্তিযোদ্ধা কারা? আপনি কি ’৭১ সালে আপনার অবস্থান ও কৃতকর্ম এবং বর্তমানে আপনার রাজনৈতিক দোসর জামায়াত-শিবির, রাজাকার, আলবদর, আলসামস ইত্যাদি ইতিহাসের নরপশুদের ভূমিকা অনুসারে মুক্তিযোদ্ধার নতুন সংজ্ঞা নির্ধারণ করছেন? আপনাকে বলতে চাই-আপনি যে-মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী এবং রাজনৈতিক উত্তরাধিকারসূত্রে একাধিকবার দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন সেই মু্ক্তিযোদ্ধাও এই মুক্তিবাহিনীরই একজন সদস্য ছিলেন। তিনিও মুক্তিযুদ্ধের প্রয়োজনে যখন-তখন সীমানা পাড়ি দিতেন। তা’হলে কি আপনার সেই প্রয়াত স্বামী- যিনি আপনার দলের প্রতিষ্ঠাতা এবং যার ইমেজের উপর ভর করেই আপনি বলেন- বিএনপি’ই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের দল, তিনিও মুক্তিযুদ্ধ করেননি? মুক্তিযুদ্ধকালীন আপনার অবস্থান এবং আপনার সম্পর্কে শ্রুত ঘটনাবলি- যেসবের কারণে স্বাধীনতা-উত্তর আপনার স্বামী আপনাকে গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন, সেসব করে আপনিই কি মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন? আপনাকে অনুরোধ করতে চাই- মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বাংলাপিডিয়া, ইউকিপিডিয়া, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা- সিআইএ’র প্রকাশিত রিপোর্ট ইত্যাদি সময় পেলে পড়ে নিন, জেনে নিন মুক্তিবাহিনী গঠনের পটভূমি, নামকরণ, সাংগঠনিক কাঠামো, যুদ্ধকৌশল ও সেসবের প্রয়োগ-পদ্ধতি।
মু্ক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানাই- দলমত নির্বিশেষে আসুন সকলে মিলে এই ঘৃণ্য বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাই, আর এই বক্তব্যদানকারীকে সর্বোত বর্জন করি। অন্যদিকে দেশবাসীর যে অংশ তাকে ভোটে নির্বাচিত করে তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই- আর কত ভুল করবেন, কী কারণে ভুল করবেন আপনারা? এই ভুলের মাশুল অপরিমেয়। খালেদা জিয়া স্বাধীনতাবিরোধী। একজন স্বাধীনতাবিরোধীর দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়াতো দূরের কথা, সংসদ সদস্য হবারও কোন অধিকার নেই।
মুক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে বক্তব্যদানের মাধ্যমে খালেদা জিয়া সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের একজন বিরোধীতাকারী হিসেবে প্রতিভাত হয়েছেন এবং রাষ্ট্রদ্রোহিতা করেছেন। তাই তার বিরুদ্ধে অনতিবিলম্বে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাই।
ফাতেমা জোহরা
তারিখ: অক্টোবর ২৩, ২০১৩ সময়: ১২:১১ অপরাহ্ন
ওই মহিলার মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সঠিক ধারনা থাকলে তো সঠিক কথা বলবে। ওর তো শুধু স্পষ্ট ধারনা আছে পাকবাহিনী আর হানাদার বাহিনী সম্পর্কে। দেখেন না পাকবাহিনী আর হানাদার বাহিনীর সাথে কি সুন্দর সন্ত্রাসী দল গঠন করছে!!!
jannatul.ferdous
তারিখ: অক্টোবর ২৪, ২০১৩ সময়: ৬:১৫ অপরাহ্ন
মু্ক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানাই- দলমত নির্বিশেষে আসুন সকলে মিলে এই ঘৃণ্য বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাই, আর এই বক্তব্যদানকারীকে সর্বোত বর্জন করি। অন্যদিকে দেশবাসীর যে অংশ তাকে ভোটে নির্বাচিত করে তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই- আর কত ভুল করবেন, কী কারণে ভুল করবেন আপনারা? এই ভুলের মাশুল অপরিমেয়। খালেদা জিয়া স্বাধীনতাবিরোধী। একজন স্বাধীনতাবিরোধীর দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়াতো দূরের কথা, সংসদ সদস্য হবারও কোন অধিকার নেই।মুক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে বক্তব্যদানের মাধ্যমে খালেদা জিয়া সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের একজন বিরোধীতাকারী হিসেবে প্রতিভাত হয়েছেন এবং রাষ্ট্রদ্রোহিতা করেছেন। তাই তার বিরুদ্ধে অনতিবিলম্বে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাই।